হাদীস পড়ি – জীবন গড়ি ::::: মে – ‘১২

আত্মীয়-স্বজনের হকের

গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

 

মাওলানা আতিকুর রহমান ভূঁইয়া

 

আত্মীয়-স্বজনের হকের গুরুত্ব

হাদীস – ১ : হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন – “রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়তা (আল্লাহ-রাহমানের সাথে মিলিত) ঢাল স্বরূপ। যে ব্যক্তি এর সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখে, আমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে থাকি। আর যে লোক এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি।”

(সহীহ-বুখারী)

হাদীস – ২ : হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন – “রাহিম (আত্মীয়তার বন্ধন) আরশের সাথে ঝুলানো আছে। সে বলে – যে আমাকে মিলিয়ে রাখবে, আল্লাহ তাকে মিলিয়ে রাখুন এবং যে আমাকে কেটে দিবে, আল্লাহ তাকে কেটে দিন।”

(সহীহ-বুখারী, সহীহ-মুসলিম)

আত্মীয়তা বজায় রাখার মাহাত্ম্য

 হাদীস – ৩ : আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যা জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কোন কিছু শরীক করো না, নামায ভাল করে আদায় কর এবং যাকাত দাও। আর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক অুণœ রাখ। (সহীহ-বুখারী)

হাদীস – ৪ : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক বেড়ে যাক এবং তার হায়াত দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করে।”

(বুখারী, মুসলিম)

 

আত্মীয়তা ছিন্ন করার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী

 হাদীস – ৫ : হযরত যুবাইর ইবনে মুতয়ীম (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (বুখারী, মুসলিম)

 


আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ভয়াবহতা

হাদীস – ৬ : হযরত আবু বাকরাতা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন – “এমন গুনাহ্্ যার অপরাধী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতে শাস্তি জমা রাখা সত্ত্বেও আবার দুনিয়াতে তাকে তাড়াতাড়ি আযাব দিয়ে থাকেন, এমন গুনাহর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হতে সেই সাজার অধিক উপযুক্ত কোনো গুনাহ নেই।

(তিরমিযী, আবু দাউদ)


আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নুহুসত

 হাদীস – ৭ : হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবি আওফা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি – “যেই সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক আছে, সেই সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হয় না।”

(বাইহাকী : শু‘আবুল ঈমান)

 

আত্মীয়তা জুড়ে থাকার ফজীলত

 হাদীস – ৮ : হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার এমন কিছু আত্মীয় আছে, যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধনের মিল রাখি, অথচ তারা আমার সাথে সেই বন্ধন কেটে দেয়। আর আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তেমনি আমি সহিষ্ণুতার সাথে তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিই, অথচ তারা আমার সাথে মূর্খের ন্যায় ব্যবহার (জুলুম) করে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি ঘটনা এমন হয়ে থাকে – যা তুমি বলেছ, তাহলে তুমি যেন তাদের উপর তপ্ত ছাই নিক্ষেপ করতেছ। (অর্থাৎ তোমার ধৈর্যের আগুন তাদেরকে শেষ করে দিবে।) আর আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বদা তোমার সাথে তাদের বিরুদ্ধে একজন সাহায্যকারী থাকবে – যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এই অবস্থার ওপর থাকবে।”

(মুসলিম)

 

হাদীস – ৮ : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : “সম্পর্কের বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপনকারী মাহাত্ম্যোত্তীর্ণ আত্মীয়তার বন্ধন রাকারী নয়। বরং মাহাত্ম্যোত্তীর্ণ আত্মীয়তার বন্ধন রাকারী হল সে – যে সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সম্পর্ক রা করে চলে।”

(সহীহ-বুখারী)

 

 

 

Related posts

Leave a Comment